মানিকগঞ্জে শতবর্ষী বালিয়াটী জমিদার বাড়ির সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের নিরবতা!

স্টাফ রিপোর্টার
0

 


মো: আবুবকর সিদ্দিক : স্টাফ রিপোর্টার, সাটুরিয়া মানিকগঞ্জ, দৈনিক সারা দুনিয়া।


মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় শতবর্ষী পুরানো বালিয়াটি জমিদার বাড়ির পুরাতন ভবন সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে জমিদার বাড়িটির বিভিন্ন সংস্কার কাজে ৬১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় , বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে প্রাসাদের একটি দুতলা ভবনে কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। শুধু মাত্র ভবনের ছাদ মেরামত করা হচ্ছে গত তিন মাস ধরে' যা এখনো শেষ হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী এক নাম্বার ইটের সুড়কি দেওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে নিম্ন মানের সুড়কি। বিশেষ ভাবে পাথুর চুনা গলিয়ে ভিজিয়ে রেখে কাজ করার নিয়ম না মেনেই নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করছেন শ্রমিকরা।

এছাড়া প্রাসাদের পাঁচটি রুমে করা হচ্ছে রংয়ের কাজ এবং নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে নতুন করে চারটি টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে।

দুতলা বিশিষ্ট প্রাসাদের সিঁড়ির অবস্থা করূন হলেও স্মৃতি জাদুঘরে উঠার একটি সিঁড়ির ধাপে কাঠ পরিবর্তন করা হয়েছে বাকি সব গুলো সিঁড়ি আগের সেই করুন রূপেই রয়েছে। সিঁড়ির দুপাশে দেওয়ালের সাথে জয়েন্টে ফাটল ধরেছে।

কর্মরত রংমিস্ত্রীরা জানান আমরা সবাই রংয়ের কাজ করি। এ পর্যন্ত ৫ টি রুম এর মধ্যে রং মহলের পাশের রুম ,দুইটি সিঁড়ি ও প্রাচীর রং করেছি। আজকেই ২০ হাজার টাকার রং লেগেছে। সর্বমোট এক লাখ টাকার রং লেগেছে।

নাটোরের বাসিন্দা স্যানিটেশন মিস্ত্রি সুরুজ মিয়া জানান মোট চারটি বাথরুমের কাজ চলছে প্রতিটিতে বাথরুমে টাইলসের খরচ হবে ১০ হাজার টাকা করে আর প্রতিটিতে স্যানিটারি মিস্ত্রি বিল হবে৫ হাজার টাকা। এছাড়াও আনুসাঙ্গিক খরচ হবে আরো ১০ হাজার টাকা প্রতিটি বাথরুমে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে খরচতো হবেই। স্বাভাবিকভাবে চারটি বাথরুমের ১ লাখ টাকা খরচ হবে ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্মাণ শ্রমিক বলেন, ছাদে ঠিক মতো কাজ করতে গেলে ১০ লাখ টাকা লাগবে। এখন তো ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে এই কারণে ছাদের উপরে ২ ইঞ্চি ঢালাই করা হচ্ছে। তারপরও আনুমানিক ৫ লাখ টাকা খরচ হবে ছাদের ঢালাই কাজে।

ইএস কনস্ট্রাকশন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শদাতা ফিরোজ জানান আমি আগে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগে কর্মরত ছিলাম। এখন চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। অবসর নেওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছি। যেহেতু আমার বিভাগের কাজ আমি ঠিকাদারের কাছ থেকে জোর করে কাজ আদায় করে নিচ্ছি। আর অনিয়মের কোন সুযোগ নাই। মিস্ত্রিরা না বুঝেই কথা বলেছেন।

সাটুরিয়া বালিয়াটী জমিদার বাড়ি কর্মরত বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সহকারী কাস্টডিয়ান নিয়াজ মাখদুম জানান আমি জানি না কতো টাকার বরাদ্দ এসেছে। ২০১৪ সালের পর এই প্রথম বরাদ্দ আসলো সাটুরিয়া জমিদার বাড়িতে সংস্কারের জন্য। প্রায় তিন মাস ধরে এখানে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অনেক দিন কাজ বন্ধ ছিলো। এখন আবার কাজ চলছে। এই কাজের বিষয়ে সব জানেন ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ সাহেব।

বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের প্রকৌশলী মোঃ মুরাদ হোসেন জানান সংস্থার কাজে অনিয়ম হলে পূনরায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সঠিক ভাবে সংস্থারের কাজ করে দিবে।

স্হানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইএস কনস্ট্রাকশন প্রয়োজনীয় সংস্কার না করে নিম্নমানের নির্মাণ উপকরণ ও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মনগড়া ভাবে সংস্থার কাজ পরিচালনা করছে ।

যার ফলে স্হানীয় এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইকবাল হোসেন জানান এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

স্হানীয় এলাকাবাসী মানিকগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী প্রায় ২০০ বছরের পুরানো জমিদার বাড়ির সংস্থার কাজ সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করছে।


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)